সহজ করে কিছু শেখা

অংক কাকে বলে - অংক কত প্রকার কি কি

এই টিউটোরিয়ালটি শেষে -

অংক কাকে বলে - তা বর্ণনা করতে পারা যাবে।

অংক কত প্রকার কি কি তা ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।

সার্থক অংক ও সহকারি অংক বিশ্লেষণ করতে পারা যাবে।

বাইনারি অংক ও ডেসিমেল অংক বলতে পারা যাবে।

বাইনারি সংখ্যা ও ডেসিমেল সংখ্যা রূপান্তর করতে পারা যাবে।



অংক কি

সংখ্যা প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একক প্রতীককে অংক বলে। যেমন তিন এবং সাত সংখ্যা দুইটিকে প্রকাশের জন্য যথাক্রমে ৩ এবং ৭ প্রতীক দুইটি ব্যবহার করা হয়। দশমিক পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকগুলো হলো ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। তাই দশমিক পদ্ধতিতে মোট অংক সংখ্যা ১০টি। তবে সংখ্যা প্রকাশ করার জন্য এই প্রতীক এককভাবেও ববহৃত হতে পারে এবং কতকগুলো প্রতীক একত্রিত হয়েও ব্যহৃত হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপঃ ছয় সংখ্যাটিকে প্রকাশ করার জন্য একক প্রতীক ৬ ব্যবহৃত হয়। আবার পাঁচশত চুরাশি সংখ্যাটিকে প্রকাশ করার জন্য তিনটি পৃথক প্রতীক ৫, ৮ ও ৪ কে একত্রে লিখে ৫৮৪ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এখানে ৫, ৮ ও ৪ তিনটি পৃথক প্রতীক বা তিনটি পৃথক অংক। আবার এই প্রতীক বা অংক তিনটির প্রত্যেকটি আলাদাভাবে এক একটি সংখ্যাও বটে। তাহলে বলা যায়, প্রতিটি অংকই এক একটি সংখ্যা। কিন্তু ৫৮৪ হলো কেবল একটি সংখ্যা। ৫৮৪ কে কখনই প্রতীক বলা যায় না। এটি কেবল তিনটি প্রতীক বা অংক দ্বারা গঠিত একটি সংখ্যা।

অংক ও সংখ্যা চিহ্নিতকরণ ও তাদের পার্থক্য।
সবুজ প্রতীকগুলো মানের ক্রমানুসারে সাজানো দশমিক অংক। লাল কালিতে লিখিত তিনটি সংখ্যা; তিনটি অংক নয়। বরং, ৫৭৩ সংখ্যাটিতে তিনটি অংক বিদ্যমান।

তাহলে বলা যায়, সংখ্যা গঠন বা প্রকাশের জন্য যেসব প্রতীক ব্যবহার করা হয় তাকে অংক বলে। দশমিক সংখ্যা জগতে মোট ১০টি অংক বিদ্যমান। যথাঃ ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯।


অংক সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভের জন্য অংক কত প্রকার কি কি তা নিয়ে আরো একটু বিশদভাবে আলোচনা প্রয়োজন। আসলে সংখ্যা পদ্ধতির উপর নির্ভর করে অংক নির্ধারিত হয়। গণিতে প্রয়োজন ও সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। আবার এক এক ধরণের সংখ্যা পদ্ধতিতে এক এক ধরণের অংক ব্যবহৃত হয়। নিচে এমন কয়েকটি সংখ্যা পদ্ধতি ও তাদের অংক নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  • দশমিক পদ্ধতি
  • বাইনারি পদ্ধতি
  • অক্টাল পদ্ধতি
  • হেক্সাডেসিমেল পদ্ধতি

দশমিক পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংক

দশমিক পদ্ধতি হলো ব্যবহারিক জীবনে সবচেয়ে আদর্শ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংকগুলো হলো ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। উপরে অংক নিয়ে যে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে তা দশমিক পদ্ধতি অনুসারেই আলোচনা করা হয়েছে।


দশমিক পদ্ধতিতে অংক কত প্রকার কি কি

দশমিক পদ্ধতিতে অংক দুই প্রকার। যথাঃ

  • সার্থক অংক
  • সহকারি অংক

সার্থক অংক

যেসব অংক কোনো সংখ্যার পূর্বে বা শেষে অথবা সংখ্যাটির অংকগুলোর মাঝে বসে নতুন একটি সংখ্যা গঠন করে তাদেরকে সার্থক অংক বলে বলে। সার্থক অংকগুলো হলোঃ ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। তাহলে সার্থক অংক সংখ্যা মোট ৯টি।

উদাহরণস্বরূপঃ ২৭৩ একটি সংখ্যা। এই সংখ্যাটির পূর্বে যেকোনো একটি অংক যেমন ৮ বসালে নতুন একটি সংখ্যা ৮২৭৩ গঠিত হয়। আবার সংখ্যাটির শেষে ৮ বসালে নতুন একটি সংখ্যা ২৭৩৮ তৈরি হয়। একইভাবে, ২৭৩ সংখ্যাটির ৭ ও ৩ অংক দুইটির মাঝে সার্থক অংক ৮ বসালে নতুন আরেকটি সংখ্যা ২৭৮৩ গঠিত হয়। তাই ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ এগুলো সবই সার্থক অংক।

সার্থক অংক, দশমিক অংক ও সহকারি অংক চিহ্নিতকরণ।
সার্থক অংক ও সহকারি অংক দেখা যাচ্ছে।

সহকারি অংক

যে অংক কোনো সংখ্যার শেষে অথবা সংখ্যাটির অংকগুলোর মাঝে বসে নতুন একটি সংখ্যা গঠন করলেও অংকটি কোনো সংখ্যার পূর্বে বসে সংখ্যাটির সাংখ্যিক মানের কোনো পরিবর্তন করতে পারে না অর্থাৎ, নতুন একটি সংখ্যা গঠন করে না তাকে সহকারি অংক বলে। ০ হলো একমাত্র সহকারি অংক। সহকারি অংক কখনও কখনও সাহায্যকারী অংক বা অভাব জ্ঞাপক অংক বলে পরিচিত। তাহলে সহকারি অংক সংখ্যা মোট ১টি।

উদাহরণস্বরূপঃ ৫৯৪ একটি সংখ্যা। এই সংখ্যাটির শেষে ১ বসালে নতুন একটি সংখ্যা ৫৯৪১ গঠিত হয়। আবার ৫৯৪ সংখ্যাটির ৫ ও ৯ অংক দুইটির মাঝে ০ অংকটি বসালে নতুন আরেকটি সংখ্যা ৫০৯৪ গঠিত হয়। কিন্তু ৫৯৪ এর পূর্বে ০ অংকটি বসালে তা হয় ০৫৯৪ যা সংখ্যাটির সাংখ্যিক মানের কোনো পরিবর্তন করে না অর্থাৎ, নতুন একটি সংখ্যা গঠিত হয় না। তাই ০ অংকটি একটি সহকারি অংক।

সার্থক অংকসমূহ ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯ - এগুলো সবই এক একটি স্বাভাবিক সংখ্যা। আবার সহকারি অংক ০ একটি পূর্ণ সংখ্যা। তাছাড়া ২, ৩, ৫ ও ৭ এই অংকগুলো এক একটি মৌলিক সংখ্যা। আবার ৪, ৬ ও ৮ অংকগুলো এক একটি যৌগিক সংখ্যা। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সব অংকই এক একটি পূর্ণ সংখ্যা।


বাইনারি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংক

বাইনারি পদ্ধতি হলো কম্পিউটারে বহুল ব্যবহৃত একটি সংখ্যা পদ্ধতি। বাইনারি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংক হলো ০ ও ১। অতএব, এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংক সংখ্যা দুইটি। কম্পিউটার এ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংক ০ ও ১ ব্যবহার করে অনেক জটিল হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে থাকে।

বাইনারি পদ্ধতিতে কিভাবে সংখ্যা লিখা হয় এবং সংখ্যাটিকে দশমিক পদ্ধতিতে রূপান্তর করলে কত হয় তা নিচে একটি উদাহরণ দ্বারা বর্ণনা করা হলো।

মনে করি, বাইনারি পদ্ধতিতে একটি সংখ্যা ১০১০০। সংখ্যাটি লিখার পদ্ধতি হলো নিম্নরূপঃ

১০১০০=(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)
১০১০০=(১⨯১৬)+(০⨯৮)+(১⨯৪)+(০⨯২)+(০⨯১)
১০১০০=১৬+০+৪+০+০
১০১০০=২০

তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাইনারি পদ্ধতিতে লিখিত সংখ্যা ১০১০০ কে দশমিক পদ্ধতিতে প্রকাশ করলে দাঁড়ায় ২০।

∴ ১০১০০ বাইনারি = ২০ দশমিক

নিচে কয়েকটি বাইনারি সংখ্যাকে ডেসিমেল সংখ্যায় রূপান্তর করে দেখানো হলো।

বাইনারি ডেসিমেলে লিখার পদ্ধতি ডেসিমেল
১১০ ১১০=(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)
১১০=(১⨯৪)+(১⨯২)+(০⨯১)
১১০=৪+২+০
১১০=৬
১১০০০১ ১১০০০১=(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)
১১০০০১=(১⨯৩২)+(১⨯১৬)+(০⨯৮)+(০⨯৪)+(০⨯২)+(১⨯১)
১১০০০১=৩২+১৬+০+০+০+১
১১০০০১=৪৯
৪৯
১০১০০১১ ১০১০০১১=(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)+(⨯২)
১০১০০১১=(১⨯৬৪)+(০⨯৩২)+(১⨯১৬)+(০⨯৮)+(০⨯৪)+(১⨯২)+(১⨯১)
১০১০০১১=৬৪+০+১৬+০+০+২+১
১০১০০১১=৮৩
৮৩
বাইনারি অংক, অক্টাল অংক ও হেক্সাডেসিমেল অংক চিহ্নিতকরণ।
বাইনারি অংক, অক্টাল অংক ও হেক্সাডেসিমেল অংক পৃথকভাবে দেখা যাচ্ছে।

অক্টাল পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংক

কম্পিউটারে ব্যবহৃত আরেকটি সংখ্যা পদ্ধতি হলো অক্টাল পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে অংকগুলো হলো ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭। অতএব অক্টাল পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংক সংখ্যা মোট ৮টি। এই আটটি অংক ব্যবহার করে অক্টাল পদ্ধতিতে সব হিসাব নিকাশ করা হয়।


হেক্সাডেসিমেল পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অংক

হিসাব নিকাশের জন্য আরেকটি জনপ্রিয় সংখ্যা পদ্ধতি হলো হেক্সাডেসিমেল পদ্ধতি। দশমিক পদ্ধতিতে ব্যবহৃত সবগুলো অংক এবং A থেকে F পর্যন্ত ইংরেজি অক্ষরগুলো হেক্সাডেসিমেল পদ্ধতিতে অংক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। দশমিক পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ১০টি অংক ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ এবং ইংরেজি বর্ণমালার প্রথম ৬টি বর্ণ A, B, C, D, E, F মিলে মোট (১০+৬) = ১৬টি অংক হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতিতে অংক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

তবে ইংরেজি বর্ণমালার এই ছয়টি অক্ষর যথাক্রমে ১০ থেকে ১৫ পর্যন্ত মান ধারণ করে অর্থাৎ,

A = ১০, B = ১১, C = ১২, D = ১৩, E = ১৪ ও F = ১৫।