তল কাকে বলে - তল কাকে বলে চিত্র সহ তল কত প্রকার
এই টিউটোরিয়ালটি শেষে-
তল কাকে বলে তা বর্ণনা করতে পারা যাবে।
তল কাকে বলে চিত্র সহ তা ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।
তল কত প্রকার তা বিশ্লেষণ করতে পারা যাবে।
জ্যামিতিতে তলের মাত্রা কি তা ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।
জ্যামিতিতে তলের বৈশিষ্ট্য কি তা বিশ্লেষণ করতে পারা যাবে।
তল কাকে বলে
যেকোনো ঘনবস্তুর এক কিংবা একাধিক উপরিভাগ বা পৃষ্ঠ রয়েছে। প্রতিটি ঘনবস্তুর উপরিভাগকেই ঘনবস্তুর তল বলে। অন্যভাবে বললে, যে জিনিসের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে কিন্তু বেধ বা উচ্চতা নেই তাকে তল বলে।
কোন বস্তুর উপরিভাগকে তল বলা হয়। অর্থাৎ, ঘনবস্তুর উপরিভাগকেই তল বলে। ঘনবস্তুর তল দ্বি-মাত্রিক।
সাধারণ অর্থে তল হলো দৃশ্যমান বস্তুর সবচেয়ে উপরিস্তর বা বহিঃস্তর। এটি বস্তুর সেই স্তর বা এলাকা যা একজন পর্যবেক্ষক তার দৃষ্টিশক্তি এবং স্পর্শ অনুভূতি দ্বারা সর্বপ্রথম উপলব্ধি করতে পারে। অন্যভাবে বলা যায়, তল হলো কোনো বস্তুর সেই অংশ বা স্তর যা অন্য কোনো বস্তুর সাথে প্রথম স্পর্শ হয়।
দ্বিমাত্রিক জ্যামিতি তল নিয়ে আলোচনা করে। কারণ তলের কেবল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে; কিন্তু এর কোনো বেধ বা উচ্চতা নেই। অর্থাৎ তল দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্ভূক্ত। তল ক্ষেত্রফলের সাথে সম্পৃক্ত; কারণ তলের কেবল ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।
তল কাকে বলে চিত্র সহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তলের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য জানা যায়। একটি ঘনবস্তু এক বা একাধিক তল নিয়ে গঠিত। ঘনবস্তুর তল থাকে - এই ধারণার চেয়েও তলের ধারণা আরেকটু ব্যাপক। তলকে পূর্ণ করা যায়, বিস্তৃত করা যায়; আবার ইন্দ্রিয় অনুভূতি দ্বারা উপলব্ধি করা যায় - এমন গুণাবলী দ্বারা আবৃত বা ব্যাপ্ত করা যায়।
যেমন - একটি ঘরের মেঝে কিছু অংশ রং করা হলে, পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে, এর তলের কতটুকু অংশ রং দ্বারা পূর্ণ বা আবৃত করা হয়েছে। আবার, একটি পাত্রের তল উত্তপ্ত করা হলে, তা ইন্দ্রিয় অনুভূতি দ্বারা উপলব্ধি করা যায়।
তল দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্গত হলেও ত্রিমাত্রিক জগতেও কিন্তু তল গঠিত হতে পারে। ত্রিমাত্রিক জগতে যে তল গঠিত হয়, তার নাম বক্রতল। ঘনবস্তুর সর্ব বহিঃস্তরকে তল বলে। ত্রিমাত্রিক জগত ঘনবস্তুর তল দ্বারা দুইটি এলাকায় বিভক্ত হয়। যেমন ত্রিমাত্রিক জগতে, একটি গোলকের তল একে বহিঃ অংশ থেকে অভ্যন্তরীন অংশে বিভক্ত করে। যদিও কোনো কোনো তল ত্রিমাত্রিক জগতে গঠিত হয়, তবুও তল মূলতঃ দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্গত। কারণ তলের কেবল ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।
তল কত প্রকার
তল সমান বা ফ্লাট হতে পারে; আবার আঁকাবাঁকা বা উঁচু-নিচু হতে পারে। তাই আকৃতির ভিত্তিতে তলকে সাধারণভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়; তা হলো -
সমতল কাকে বলে
যে তল সমান (flat) অর্থাৎ, কোথায়ও উঁচু বা কোথায়ও নিচু নয় তাকে সমতল বলে।
আবার, স্থানাঙ্ক জ্যামিতির সাহায্যে সমতলকে সংজ্ঞায়িত করলে দাঁড়ায়,
কোনো তলে একটি সরলরেখা আঁকা হলে সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু যদি ঐ তলে অবস্থিত হয়, তবে সেই তলকে সমতল বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, সমতল হলো সেইসব দ্বিমাত্রিক বিন্দুসমূহের সেট, যে সেটের যে কোনো দুইটি বিন্দু দ্বারা সরলরেখা অঙ্কন করা হলে সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু যদি ঐ সেটের উপাদান হয়।
সাধারণভাবে, যে দ্বিমাত্রিক তল সমান (flat) বা উঁচু-নিচু নয় এমন তল উভয় দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত তাকে সমতল বলে। সমতল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর উভয়দিকে অসীম পর্যন্ত বিরাজমান। সমতলের কেবল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আছে; কিন্তু বেধ নেই।
সমতলকে দৃশ্যমান করা খুবই কঠিন; কারণ বাস্তবে জীবনে এমন কোন কিছু নেই যা দ্বারা বেধহীন এই সমতলের কোনো সত্য উদাহরণ দেওয়া যায়। যেমন- একটি পুকুরের পানি ও ভূপৃষ্টের বায়ুকে বিভক্তকারী বিভেদ তল হলো একটি সমতল, যা অনুধাবণ করা যায়। কিন্তু এই তলকে দৃশ্যমান করা কঠিন। যাহোক ঘরের দেয়ালের তল, মেঝের তল, বইয়ের একটি পৃষ্ঠার তল - এ সবই সমতলকে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখা দরকার, জ্যামিতিতে সমতল হলো দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর উভয়দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত।
বক্র তল কাকে বলে
যে তল কোথায়ও উঁচু আবার কোথায়ও নিচু তাকে বক্রতল বলে।
অন্যভাবে বললে.., যে তল সমতল নয় তাকে বক্রতল বলে। অতএব, বলা যায় সমতল ছাড়া সকল তলই বক্র তল।
আবার, স্থানাঙ্ক জ্যামিতির সাহায্যে বক্রতলকে সংজ্ঞায়িত করলে দাঁড়ায়,
কোনো তলে একটি সরলরেখা আঁকা হলে সরলরেখার প্রতিটি বিন্দু যদি ঐ তলে অবস্থিত না হয়, তবে সেই তলকে বক্রতল বলে। এক্ষেত্রে সরলরেখাটির উপর অবস্থিত কমপক্ষে একটি বিন্দু থাকে, যে বিন্দুটি ঐ তলে থাকে না।
এই তলটি সমান তল নয়। তলটির কোথায়ও উঁচু, আবার কোথায়ও ঢালু। অতএব, এটি একটি বক্রতল।
আবার অন্যভাবে বলা যায়..., এই তলটিতে কোনো সরলরেখা আঁকা হলে, রেখাটির সকল বিন্দু তলে অবস্থান করে না। অর্থাৎ, তলটির উপর কোনো সরলরেখা স্থাপন করলে সরলরেখাটির সকল বিন্দু এই তলে অবস্থিত নয়। তাই এটি বক্রতলের সকল বৈশিষ্ট্য বহন করে। সুতরাং, এটি একটি বক্রতল।
তলের মাত্রা
তল ক্ষেত্রফল সম্পর্কিত জ্যামিতির সাথে সম্পৃক্ত। তলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থাকে। তলের ক্ষেত্রফল পরিমাপ করা হয়। তাই তল দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্ভূক্ত। সমতল - দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর সীমাহীনভাবে বিস্তৃত। আবার তল দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির আলোচনার বিষয়বস্তু হলেও বক্রতল কিন্তু ত্রিমাত্রিক জগতে গঠিত হয়। বক্রতল ত্রিমাত্রিক জগতে তৈরি হলেও বক্রতলের কেবল ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়। তাই বক্রতলও দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির বিষয়বস্তু হিসাবে গণ্য হয়। অতএব একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সমতল বা বক্রতল যে তলই হোক না কেন - সকল তলই দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং, তলের মাত্রা দুই।