সহজ করে কিছু শেখা

অন্তঃস্থ কোণ কাকে বলে

এই টিউটোরিয়ালটি শেষে -

অন্তঃস্থ কোণ কাকে বলে তা বর্ণনা করতে পারা যাবে।

অন্তঃস্থ কোণ কাকে বলে - তা চিত্রসহ ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।

অন্তঃস্থ কোণের বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।

দৈনন্দিন জীবনে অন্তঃস্থ কোণের প্রয়োগ করতে পারা যাবে।



অন্তঃস্থ কোণ

বহুভুজের অভ্যন্তরে দুটি বাহুর ছেদ বিন্দুতে যে কোণ উৎপন্ন হয় তাকে অন্তঃস্থ কোণ বলে। অন্যভাবে বললে, কোনো বহুভুজের একটি শীর্ষবিন্দুতে বহুভুজের অভ্যন্তরে যে কোণ গঠিত হয়, সেটাই হল সেই শীর্ষবিন্দুর অন্তঃস্থ কোণ।

সহজ কথায়, কোনো একটি বহুভুজের যেকোনো একটি শীর্ষবিন্দুতে দুটি বাহু মিলিত হয়ে বহুভুজের অভ্যন্তরে যে কোণ উৎপন্ন করে, তাকে সেই শীর্ষবিন্দুর অন্তঃস্থ কোণ বলা হয়। আরও সহজ করে বললে, কোনো বহুভুজের ভেতরে যে কোণগুলো থাকে, সেগুলোই হল অন্তঃস্থ কোণ। আশাকরি, অন্তঃস্থ কোণ কাকে বলে তা বুঝা গেছে। এই কোণগুলো সবসময় বহুভুজের ভিতরের দিকে অবস্থিত। যেকোনো বহুভুজের যে কয়টি শীর্ষ বিন্দু থাকে, ঠিক অন্তঃস্থ কোণের সংখ্যাও একই থাকে। অর্থাৎ, একটি বহুভুজের প্রতিটি শীর্ষবিন্দুর জন্য একটি ও কেবল একটি অন্তঃস্থ কোণ বিদ্যমান। যেমন, একটি ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃস্থ কোণ, একটি চতুর্ভুজের চারটি অন্তঃস্থ কোণ ও একটি পঞ্চভুজের পাঁচটি অন্তঃস্থ কোণ রয়েছে।

মূলত: ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ বা যেকোনো বহুভুজের দুটি বাহু মিলিত হয়ে এদের অভ্যন্তরে এক একটি কোণ উৎপন্ন করে। এসব কোণগুলোই অন্তঃস্থ কোণ। অন্তঃস্থ কোণ জ্যামিতির একটি মৌলিক ধারণা। জ্যামিতির মৌলিক ধারণাসমূহের একটি। যদিও এর সংজ্ঞা ও ধারণাটি খুবই সহজ, তবে এর গুরুত্ব ও গভীরতা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিস্তার অপরিসীম। এই টিউটোরিয়ালটিতে অন্তঃস্থ কোণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিস্তারিত বিশ্লেষণ তথা এর ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য, বিভিন্ন ধরনের বহুভুজে অন্তঃস্থ কোণের মান নির্ণয় ও এর সাথে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক জীবনে এর প্রয়োগের ক্ষেত্রগুলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যাবে।

অন্তঃস্থ কোণ চিত্র
একটি অন্তঃস্থ কোণ চিত্র।

অন্তঃস্থ কোণের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য

অন্তঃস্থ কোণ জ্যামিতির অনেক গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বের ভিত্তি। এটি আমাদেরকে বহুভুজের বিভিন্ন ধর্ম বুঝতে সাহায্য করে। অন্তঃস্থ কোণ সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান লাভ করতে হলে কেবল অন্তঃস্থ কোণ কাকে বলে -এইটুকু জানাই যথেষ্ট না। তার সাথে এর ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও জানা জরুরী। নিচে অন্তঃস্থ কোণের কতকগুলো ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

  1. বহুভুজের প্রতিটি শীর্ষবিন্দুর জন্য কেবল একটি অন্তঃস্থ কোণ থাকে।
  2. উত্তল চতুর্ভুজ বা উত্তল বহুভুজের প্রতিটি অন্তঃস্থ কোণের মান 180° অপেক্ষা কম।
  3. কোনো বহুভুজের সকল অন্তঃস্থ কোণের যোগফল একটি নির্দিষ্ট সূত্র দ্বারা নির্ণয় করা যায়।
  4. কোনো বহুভুজের অন্তঃস্থ কোণের সংখ্যা তার বাহুর সংখ্যার সমান হয়।
  5. কোনো বহুভুজের সকল অন্তঃস্থ কোণের যোগফল একটি নির্দিষ্ট ধ্রূব সংখ্যা হয়।
  6. ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃস্থ কোণের পরিমাপ সমান হলে সেটি সমবাহু ত্রিভুজ হয়ে যায়।
  7. চতুর্ভুজের চারটি অন্তঃস্থ কোণের পরিমাপ সমান হলে সেটি আয়ত হয়ে যায়।
  8. চতুর্ভুজের চারটি বাহুর দৈর্ঘ্য সমান এবং চারটি অন্তঃস্থ কোণের পরিমাপ সমান হলে সেটি বর্গ হয়ে যায়।
  9. বহুভুজের অন্তঃস্থ কোণ সংলগ্ন একটি বাহুকে বর্ধিত করলে যে কোণ উৎপন্ন হয় তা একটি বহিঃস্থ কোণ।
  10. বহুভুজের অন্তঃস্থ কোণ এবং বহিঃস্থ কোণের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান।
  11. প্রত্যেকটি অন্তঃস্থ কোণের বিপরীতে দুইটি বহিঃস্থ কোণ উৎপন্ন হয়।
  12. একটি অন্তঃস্থ কোণ ও তার সন্নিহিত যেকোনো একটি বহিঃস্থ কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ বা ১৮০° হয়।

বহুভুজে অন্তঃস্থ কোণের মান নির্ণয়

এতক্ষণে অন্তঃস্থ কোণ সম্পর্কে বেশকিছু জানলাম। কিন্তু অন্তঃস্থ কোণ কাকে বলে তা জানা গেলেও বিভিন্ন ধরনের বহুভুজে অন্তঃস্থ কোণের মান কত ও তা কিভাবে নির্ণয় যায় তা এখন শিখা হয়নি। তাহলে, এখন বহুভুজে কিভাবে অন্তঃস্থ কোণের মান নির্ণয় করা যায় তা শিখে নেওয়া যাক। নিচে বিভিন্ন ধরনের বহুভুজে অন্তঃস্থ কোণের মান কত ও তা কিভাবে নির্ণয় যায় তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।

  1. ত্রিভুজ: ত্রিভুজের তিনটি অন্তঃস্থ কোণের যোগফল সর্বদা 180°।
  2. সমবাহু ত্রিভুজ: সমবাহু ত্রিভুজের প্রতিটি অন্তঃস্থ কোণের পরিমাপ 60° ডিগ্রি।
  3. সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ: সমদ্বিবাহু ত্রিভুজের যেকোনো একটি অন্তঃস্থ কোণের পরিমাপ জানা থাকলে অন্যান্য অন্তঃস্থ কোণগুলো পরিমাপ করা যায়।
  4. চতুর্ভুজ: চতুর্ভুজের চারটি অন্তঃস্থ কোণের সমষ্টি সর্বদা 360°।
  5. আয়তক্ষেত্র বা বর্গক্ষেত্র: একটি আয়তক্ষেত্র বা বর্গক্ষেত্রের প্রতিটি অন্তঃস্থ কোণের পরিমাপ 90°।
  6. পঞ্চভুজ: পঞ্চভুজের পাঁচটি অন্তঃস্থ কোণের যোগফল সর্বদা 540°।
  7. ষড়ভুজের ছয়টি অন্তঃস্থ কোণের যোগফল 720°।
  8. বহুভুজের সাধারণ সূত্র: n বাহুবিশিষ্ট কোনো বহুভুজের সকল অন্তঃস্থ কোণের সমষ্টি (n-2) × 180°।

এভাবে বিভিন্ন ধরনের বহুভুজের জন্য অন্তঃস্থ কোণের যোগফল অনায়াসে নির্ণয় করা যায়।


অন্তঃস্থ কোণের প্রয়োগ ক্ষেত্র

অন্তঃস্থ কোণের ধারণা জ্যামিতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারিক জীবনের যেসকল ক্ষেত্রে অন্তঃস্থ কোণের প্রয়োগ রয়েছে তা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।

  1. ত্রিকোণমিতি: ত্রিকোণমিতিতে অন্তঃস্থ কোণের মান ব্যবহার করে ত্রিভুজের বাহুগুলির দৈর্ঘ্য এবং কোণগুলোর মান পরিমাপ করা যায়।
  2. ত্রিমাত্রিক জ্যামিতি: ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক বস্তুর কোণগুলির মান নির্ণয় করা হয়।
  3. বহুভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়: অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের বহুভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।
  4. বেষ্টিত জ্যামিতি: বৃত্ত সম্পর্কিত জ্যামিতিক সমস্যা সমাধানে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহৃত হয়।
  5. আকাশ বিজ্ঞান: ভূমি থেকে বিভিন্ন উচ্চতায় অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানের অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
  6. ভেক্টর জ্যামিতি: ভেক্টর জ্যামিতিতে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহার করে ভেক্টরগুলির মধ্যকার কোণ নির্ণয় করা হয়।
  7. থ্রিডি মডেলিং: থ্রিডি মডেলিংয়ে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক বস্তুর আকার ও আকৃতি নির্ধারণ করা হয়।
  8. ভূমি জরিপ: ভূমি জরিপে জমির আকার ও পরিমাপ নির্ণয় করতে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহৃত হয়।
  9. স্থাপত্য: বিভিন্ন ধরনের ভবন, সেতু ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ ও স্থাপনার নকশা তৈরিতে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহৃত হয়।
  10. কম্পিউটার গ্রাফিক্স: কম্পিউটার গ্রাফিক্সে ত্রিমাত্রিক বস্তু তৈরি করতে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহৃত হয়।
  11. ইঞ্জিনিয়ারিং: মেশিন, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহৃত হয়।
  12. ভূগোল: ভূগোলে ভূমির আকৃতি, দিক নির্ণয় এবং অন্যান্য ভৌগলিক বিষয়ের হিসাব-নিকাশ করতে অন্তঃস্থ কোণের ধারণা ব্যবহৃত হয়।

পরিশেষে, অন্তঃস্থ কোণ জ্যামিতির একটি মৌলিক ধারণা যা আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বুঝতে সাহায্য করে। এই কোণ আমাদেরকে বহুভুজের বিভিন্ন ধর্ম বুঝতে সাহায্য করে এবং ব্যবহারিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এই টিউটোরিয়ালটিতে অন্তঃস্থ কোণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি এই নিবন্ধটি পাঠকদের অন্তঃস্থ কোণ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছে এবং জ্ঞান ভাণ্ডারকে কিছুটা হলেও সমৃদ্ধ করতে পেরেছে।