আয়ত কাকে বলে ও আয়তক্ষেত্রের পরিসীমার সূত্র
এই টিউটোরিয়ালটি শেষে -
আয়ত কাকে বলে - তা বর্ণনা করতে পারা যাবে।
আয়তক্ষেত্রের পরিসীমার সূত্র ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।
আয়তক্ষেত্রের আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।
আয়তক্ষেত্রের কর্ণের সূত্র বিশ্লেষণ করতে পারা যাবে।
আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র প্রয়োগ করতে পারা যাবে।
আয়ত কাকে বলে
চতুর্ভুজের কোণগুলো সমকোণ বা ৯০০ হলে তাকে আয়ত বলে।
চতুর্ভুজের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান ও সমান্তরাল এবং প্রত্যেকটি অন্তঃস্থ কোণ সমকোণ বা ৯০০ হলে তাকে আয়ত বলে। আয়তের সংজ্ঞা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, আয়তের দুই জোড়া বিপরীত বাহু পরস্পর সমান ও সমান্তরাল। বিধায়, আয়ত একটি সামান্তরিক। কারণ সামান্তরিকের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান ও সমান্তরাল।
আয়তক্ষেত্র কাকে বলে
আয়ত দ্বারা আবদ্ধ ক্ষেত্রকে আয়তক্ষেত্র বলে। অন্যভাবে বললে, সামান্তরিকের একটি কোণ সমকোণ হলে তাকে আয়তক্ষেত্র বলে। সুতরাং, আয়তক্ষেত্র হলো সামান্তরিকের একটি বিশেষ রূপ। আয়তক্ষেত্রের প্রত্যেকটি কোণের পরিমাপ ৯০০। তাই আয়তক্ষেত্রকে সমকোণী চতুর্ভুজ বলা হয়।
আয়তক্ষেত্রের প্রত্যেক জোড়া বিপরীত বাহু পরস্পর সমান ও সমান্তরাল। আবার, আয়তক্ষেত্রের বাহুগুলো পরস্পর সমান হলে তখন এটি বর্গক্ষেত্র হয়ে যায়। তাই বর্গক্ষেত্র হলো আয়তক্ষেত্রের একটি বিশেষ রূপ। অর্থাৎ, বর্গক্ষেত্র হলো একটি বিশেষ ধরণের আয়তক্ষেত্র যার সবগুলো বাহুর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান। তাহলে বলা যায়, প্রত্যেকটি আয়তক্ষেত্র একটি সামান্তরিক এবং প্রত্যেকটি বর্গক্ষেত্র একইসাথে একটি আয়তক্ষেত্র এবং একটি রম্বস কারণ রম্বসের সকল বৈশিষ্ট বর্গক্ষেত্র ধারণ করে।
আয়তের ক্ষেত্রফল, পরিসীমা ও কর্ণ পরিমাপের এ্যাপ
পরিসীমাঃ 14
ক্ষেত্রফলঃ 12
কর্ণঃ 5
প্রথমে বাটন নির্বাচন; অতপরঃ নিচের ডানদিকের লাল অংশ ড্রাগ করলে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
আয়তক্ষেত্র সূত্র
সাধারণভাবে, আয়তক্ষেত্রের যেসব সূত্র সচরাচর ব্যবহৃত হয় তা নিচে দেওয়া হলো।
- আয়তক্ষেত্রের পরিসীমার সূত্র
- আয়তক্ষেত্রের কর্ণের দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের সূত্র
- আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সূত্র
আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা
আয়তক্ষেত্রের সবগুলো বাহুর সমষ্টিকে আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা বলে। অতএব আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা বলতে বুঝায় এর চারদিকের সীমানার দৈর্ঘ্য। যেহেতু আয়তক্ষেত্রের বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান, তাই এর একজোড়া সন্নিহিত বাহুর দৈর্ঘ্যের সমষ্টিকে দ্বিগুণ করলে পরিসীমা পাওয়া যায়।
আয়তক্ষেত্রের পরিসীমার সূত্র
মনেকরি ABCD আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য AB = CD = a এবং প্রস্থ BC = AD = b.
সুতরাং আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা, P হলে,
P = (AB + BC + CD + AD) একক
বা, P = (a + a+ b + b) একক
বা, P = (২a + ২b) একক
∴ P = ২×(a + b) একক
সুতরাং, আয়তক্ষেত্রের পরিসীমার সূত্র =২×( দৈর্ঘ্য + প্রস্থ ) একক
আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য a, প্রস্থ b এবং পরিসীমা P হলে,
P = 2×(a + b) একক
উদাহরণঃ
একটি আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য ১৫ সেমি ও প্রস্থ ১০ সেমি হলে পরিসীমা কত?
সমাধানঃ মনে করি, আয়তক্ষেত্রটির দৈর্ঘ্য a = ১৫ সেমি এবং প্রস্থ b = ১০ সেমি।
এখন আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র ব্যবহার করে পাওয়া যায়,
আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা = ২ ×(দৈর্ঘ্য + প্রস্থ) একক
বা, আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা = ২ ×(a + b) একক
বা, আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা = ২ ×(১৫ + ১০) সেমি
বা, আয়তক্ষেত্রের পরিসীমার সূত্র = (২ ×২৫) সেমি
∴ আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা = ৫০ সেমি
আয়তক্ষেত্রের কর্ণ
আয়তক্ষেত্রের যে কোন দুইটি বিপরীত শীর্ষের সংযোজক রেখাংশকে আয়তক্ষেত্রের কর্ণ বলে। বিপরীত শীর্ষগুলো যোগ করলে এরূপ দুইটি রেখাংশ পাওয়া যায়। তাই একটি আয়তক্ষেত্রের মোট দুইটি কর্ণ থাকে। আয়তক্ষেত্রের কর্ণ দ্বারা আয়তক্ষেত্রটি দুইটি সর্বসম ত্রিভুজে বিভক্ত হয়। আবার উৎপন্ন ত্রিভুজ দুইটি সমকোণী ত্রিভুজ এবং প্রত্যেকটি ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের অর্ধেক। আয়তক্ষেত্রের কর্ণদ্বয়ের দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান। তাছাড়া, আয়তক্ষেত্রের কর্ণদ্বয় পরস্পরকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
আয়তক্ষেত্রের কর্ণের সূত্র
মনেকরি, একটি আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য a, প্রস্থ b এবং কর্ণ d. আবার a, b এবং d বাহু তিনটি দ্বারা গঠিত ত্রিভুজটি একটি সমকোণী ত্রিভুজ যার অতিভুজ d এবং ভুমি ও লম্ব যথাক্রমে a ও b. সুতরাং, পিথাগোরাসের উপপাদ্য অনুসারে
d2 = a2 + b2
∴ d = √(a2 + b2)
∴ কর্ণ = √(দৈর্ঘ্য)2 + (প্রস্থ)2 একক
আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য a, প্রস্থ b এবং কর্ণ d হলে,
d = √(a2 + b2)
উদাহরণঃ
একটি আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য ১২ সেমি ও প্রস্থ ৫ সেমি হলে আয়তক্ষেত্রের কর্ণ কত?
সমাধানঃ মনে করি, আয়তক্ষেত্রটির দৈর্ঘ্য a = ১২ সেমি এবং প্রস্থ b = ৫ সেমি।
এখন আয়তক্ষেত্রের আয়তক্ষেত্রের কর্ণ নির্ণয়ের সূত্র ব্যবহার করে পাওয়া যায়,
আয়তক্ষেত্রের কর্ণ = √(দৈর্ঘ্য)2 + (প্রস্থ)2 একক
বা, আয়তক্ষেত্রের কর্ণ = √a2 + b2 একক
বা, আয়তক্ষেত্রের কর্ণ = √(১২)২ + (৫)২ সেমি
বা, আয়তক্ষেত্রের কর্ণ = √১৪৪ + ২৫ সেমি
বা, আয়তক্ষেত্রের কর্ণ = √১৬৯ সেমি
বা, আয়তক্ষেত্রের কর্ণ = √(১৩)২ সেমি
বা, আয়তক্ষেত্রের কর্ণ = ১৩ সেমি
∴ আয়তক্ষেত্রের কর্ণ = ১৩ সেমি
আয়তক্ষেত্র উদাহরণ
আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল
আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্যকে প্রস্থ দ্বারা গুণ করলে আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়। আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বলতে বুঝায় এর মাঝে কতটুকু জায়গা আছে অর্থাৎ আয়তক্ষেত্রটি সমতলের কতটুকু স্থান দখল করে আছে। যেহেতু ক্ষেত্রফল দ্বিমাত্রিক জ্যামিতির অন্তর্গত, তাই মনে রাখা দরকার - ক্ষেত্রফলের সাথে উচ্চতার কোন সম্পর্ক নেই।
আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র
মনে করি, আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য a, প্রস্থ b এবং ক্ষেত্রফল A.
সুতরাং, আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল= (দৈর্ঘ্য × প্রস্থ) বর্গএকক
∴ A = ab বর্গএকক
আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য a, প্রস্থ b এবং ক্ষেত্রফল A হলে,
A = ab বর্গএকক
উদাহরণঃ
একটি আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য ১৩ সেমি ও প্রস্থ ৮ সেমি হলে ক্ষেত্রফল কত?
সমাধানঃ মনে করি, আয়তক্ষেত্রটির দৈর্ঘ্য a = ১৩ সেমি এবং প্রস্থ b = ৮ সেমি।
এখন আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র ব্যবহার করে পাওয়া যায়,
আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = (দৈর্ঘ্য × প্রস্থ) বর্গ একক
বা, আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = (a × b) বর্গ একক
বা, আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = (১৩ × ৮) বর্গ সেমি
বা, আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = ১০৪ বর্গ সেমি
∴ আয়তক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল = ১০৪ বর্গ সেমি