বৃত্তচাপ কাকে বলে
এই টিউটোরিয়ালটি শেষে ...
বৃত্তচাপ কাকে বলে তা বর্ণনা করতে পারা যাবে।
বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে পারা যাবে।
বৃত্তের পরিধির যেকোনো অংশকে বৃত্তচাপ বলে। অন্যভাবে বললে, একটি বৃত্তের একটি নির্দিষ্ট অংশকে বৃত্তচাপ বলে। তাহলে, বৃত্তচাপ হলো বৃত্তের পরিধির একটি অংশ। আরেকভাবে বৃত্তচাপকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, তাহলো- বৃত্তের পরিধির উপর যেকোনো দুইটি বিন্দুর মধ্যবর্তী অংশটুকুই হল বৃত্তচাপ। উদাহরণস্বরূপ: হাতে পরিধানের একটি চুড়ি যদি ভেঙে দুই টুকরা হয়, তাহলে প্রত্যেকটি টুকরাই এক-একটি বৃত্তচাপ। আবার, একটি চাকা ঘুরলে চাকার উপর যে কোনো বিন্দু একটি বৃত্তচাপ বরাবর গতিশীল হয়। গণিতের উচ্চতর গবেষণায় বৃত্ত বিষয়ক তত্ত্ব ও ধারণাগুলো সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে হলে বৃত্তচাপ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। আশাকরি, পাঠ শেষে বৃত্তচাপ সম্পর্কিত মৌলিক ধারণাগুলো স্পষ্ট হবে।
কয়েক ধরণের বৃত্তচাপের একটি তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- উপচাপ
- অধিচাপ
- অর্ধ-বৃত্তচাপ
- পূর্ণ-বৃত্তচাপ
অর্ধ-বৃত্তচাপ
বৃত্তের ব্যাস দ্বারা সম্পূর্ণ বৃত্তটি যে দুইটি সমান চাপে বিভক্ত হয় তাদের প্রত্যেকটিকে অর্ধ-বৃত্তচাপ বলে। উপরের দ্বিতীয় চিত্রে, একটি ব্যাস দ্বারা বৃত্তটি সমান দুইটি বৃত্তচাপে বিভক্ত হয়েছে। একটি বৃত্তচাপ লাল বা রঙিন অংশ এবং আরেকটি বৃত্তচাপ কালো অংশ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের প্রত্যেকটি অর্ধ-বৃত্তচাপ।
উপচাপ
অর্ধবৃত্ত অপেক্ষা ছোট চাপকে উপচাপ বলে। প্রথম চিত্রে, একটি বৃত্তের পরিধিকে লাল বা রঙিন অংশ এবং কালো অংশ দ্বারা বিভক্ত করা হয়েছে। রঙিন বৃত্তচাপকে AB দ্বারা সূচিত করা হয়েছে। অপরদিকে কালো বৃত্তচাপকে ACDB দ্বারা সূচিত করা হয়েছে। লক্ষ করি, AB বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য অর্ধবৃত্ত অপেক্ষা ছোট। একারণে AB বৃত্তচাপ হলো বৃত্তের একটি উপচাপ।
অধিচাপ
অর্ধবৃত্ত অপেক্ষা বড় চাপকে অধিচাপ বলে। লক্ষ করি, প্রথম চিত্রে ACDB বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য অর্ধবৃত্ত অপেক্ষা বড়। একারণে এখানে ACDB বৃত্তচাপ হলো বৃত্তের একটি অধিচাপ।
পূর্ণ-বৃত্তচাপ
বৃত্তের পরিধি নিজেও একটি চাপ। এটি সর্ববৃহৎ চাপ যা অপেক্ষা বড় আর কোনো বৃত্তচাপ হতে পারে না। সর্ববৃহৎ এ চাপটিই হলো পূর্ণ-বৃত্তচাপ।
একটি বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে উপচাপ, অধিচাপ, অর্ধবৃত্তচাপ ও পূর্ণ-বৃত্তচাপ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
- একটি ঘড়ির মিনিটের কাঁটা দশ মিনিটে ঘড়ির ডায়ালের পরিধি বা বৃত্তচাপ বরাবর যে পরিমান দূরত্ব অতিক্রম করে তা একটি উপচাপ।
- একটি ঘড়ির মিনিটের কাঁটা ত্রিশ মিনিটি বা আধা ঘণ্টায় ঘড়ির ডায়ালের পরিধি বা বৃত্তচাপ বরাবর যে পরিমান দূরত্ব অতিক্রম করে তা একটি অর্ধ-বৃত্তচাপ।
- একটি ঘড়ির মিনিটের কাঁটা চল্লিশ মিনিটে ঘড়ির ডায়ালের পরিধি বা বৃত্তচাপ বরাবর যে পরিমান দূরত্ব অতিক্রম করে তা একটি অধিচাপ।
- একটি ঘড়ির মিনিটের কাঁটা এক ঘণ্টায় ঘড়ির ডায়ালের সম্পূর্ণ পরিধি বরাবর একবার ঘুরে এসে যে পরিমান দূরত্ব অতিক্রম করে তা একটি পূর্ণ-বৃত্তচাপ।
বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের সূত্র
প্রত্যেকটি বৃত্তচাপের প্রান্তবিন্দুদ্বয় ও কেন্দ্রের সংযোজক রেখাংশ দুইটি বৃত্তের কেন্দ্রে একটি কোণ উৎপন্ন করে। মনে করি, একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ r একক এবং s দৈর্ঘ্যের একটি বৃত্তচাপ কেন্দ্রে θ রেডিয়ান কোণ উৎপন্ন করে। তাহলে, বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের সূত্রটি হবে নিম্নরূপ:
s = rθ যেখানে,
s = বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য
r = বৃত্তের ব্যাসার্ধ এবং
θ = বৃত্তচাপ দ্বারা কেন্দ্রে রেডিয়ানে উৎপন্ন কোণ।
বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের সূত্র একটি সরল এবং কার্যকরী সূত্র। এটি দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেকোনো একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ এবং কোনো একটি চাপ দ্বারা কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ জানা থাকলে, খুব সহজেই বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা যায়।
উদাহরণ: মনে করি, একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ 10 সেমি এবং একটি বৃত্তচাপ দ্বারা কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ 30°। বৃত্তচাপটির দৈর্ঘ্য কত?
সমাধান: মনে করি,
বৃত্তের ব্যাসার্ধ r = 10 সেমি,
বৃত্তচাপটির দৈর্ঘ্য = s সেমি এবং
বৃত্তচাপটি দ্বারা কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ θ = 30°।
আমরা জানি,
s = rθ
বা, s = 10 × 30°
বা, s = 10 × π180 × 30 [ ∵ 1° = π180 ]
বা, s = 10 × π6
বা, s = 10 × 3.14166
বা, s = 10 × 0.5236
∴ s = 5.236
সুতরাং, বৃত্তচাপটির দৈর্ঘ্য 5.236 সেন্টিমিটার।
বৃত্তচাপ দ্বারা উৎপন্ন ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র
প্রত্যেকটি বৃত্তচাপ দ্বারা কেন্দ্র পর্যন্ত একটি ক্ষেত্রফল উৎপন্ন হয়। এটি বৃত্তকলা নামে পরিচিত। মনে করি, r ব্যাসার্ধের একটি বৃত্তে s দৈর্ঘ্যের একটি বৃত্তচাপ কেন্দ্রে θ রেডিয়ান কোণ উৎপন্ন করে। এভাবে, উৎপন্ন বৃত্তকলাটির ক্ষেত্রফল A হলে,
A = 12 r2θ বর্গ একক।
জ্যা
যেকোনো বৃত্তচাপের সাথে জ্যা সম্পৃক্ত। বৃত্তচাপের প্রান্তবিন্দু দুইটির সংযোজক রেখাংশই হলো জ্যা।
কেন্দ্রস্থ কোণ
যেকোনো বৃত্তচাপের সাথে কেন্দ্রস্থ কোণ সম্পৃক্ত। বৃত্তচাপের প্রান্তবিন্দুদ্বয় ও কেন্দ্রের সংযোজক রেখাংশ দুইটি বৃত্তের কেন্দ্রে যে কোণ উৎপন্ন করে তাই কেন্দ্রস্থ কোণ।
বৃত্তস্থ কোণ
যেকোনো বৃত্তচাপের সাথে বৃত্তস্থ কোণ সম্পর্কিত। বৃত্তের উপরস্থ কোনো বিন্দু ও বৃত্তচাপের প্রান্তবিন্দু দুইটির সংযোজক রেখাংশ বৃত্তের উপরস্থ ঐ বিন্দুতে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে বৃত্তস্থ কোণ বলে।
ব্যাস
একটি অর্ধ-বৃত্তচাপ বৃত্তের ব্যাসের সাথে সম্পর্কিত। অর্ধ-বৃত্তচাপ দ্বারা সৃষ্ট জ্যা হলো ব্যাস।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে বৃত্তচাপ ব্যবহৃত হয়। নিচে বৃত্তচাপের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।
- কম্পিউটার গ্রাফিক্স: কম্পিউটার গ্রাফিক্সে বৃত্তচাপের ব্যাপক প্রয়োগ হতে দেখা যায়।
- প্রকৌশল: চাকা, গিয়ার, পাইপলাইন ইত্যাদি ডিজাইনে বৃত্তচাপ ব্যবহৃত হয়।
- ত্রিমাত্রিক জ্যামিতি: ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে বৃত্তচাপের খুব বেশি প্রয়োগ হতে দেখা যায়।
- গণিত: বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যা সমাধানে প্রতিনিয়তই বৃত্তচাপ ব্যবহৃত হয়।
- ভূগোল: পৃথিবীর যেকোনো স্থানের বৃত্তাকার আকারের কোনো অংশের দূরত্ব নির্ণয়ে বৃত্তচাপ ব্যবহৃত হয়।
সচরাচর যেসব প্রশ্ন করা হয়ে থাকে - Frequently Asked Questions (FAQ)
বৃত্তচাপ সংক্রান্ত যেসব প্রশ্নসমূহ সচরাচর মানুষ করে থাকে।
বৃত্তের পরিধির যেকোনো একটি অংশ হলো বৃত্তচাপ। একটি বৃত্তের একাধিক বৃত্তচাপ থাকতে পারে। একটি বৃত্তে উপচাপ, অধিচাপ, অর্ধবৃত্ত চাপ উৎপন্ন হতে পারে।
একটি বৃত্তে দুইটি চাপ উৎপন্ন হলে বৃহত্তম চাপটিকে অধিচাপ বলে। আর ক্ষুদ্রতম চাপটিকে উপচাপ বলে।
বৃত্তের ব্যাস দ্বারা বৃত্তটি যে দুইটি চাপে বিভক্ত হয় তাদের প্রত্যেকটিকে অর্ধবৃত্ত চাপ বলে। অর্ধবৃত্ত চাপ দুইটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের সূত্রটি নিম্নরূপ:
s = rθ যেখানে,
s = বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য
r = বৃত্তের ব্যাসার্ধ এবং
θ = বৃত্তচাপ দ্বারা কেন্দ্রে রেডিয়ানে উৎপন্ন কোণ।
বৃত্তচাপের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
- একটি উপচাপ দ্বারা কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ সবসময় দুই সমকোণ বা ১৮০° অপেক্ষা ছোট হয়।
- একটি অধিচাপ দ্বারা কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ সবসময় দুই সমকোণ বা ১৮০° অপেক্ষা বড় হয়।
- একটি অর্ধ-বৃত্তচাপের প্রান্তবিন্দু দুইটির সংযোজক রেখাংশ দ্বারা যে জ্যা উৎপন্ন হয় তা একটি ব্যাস।