সহজ করে কিছু শেখা

বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্র

এই টিউটোরিয়ালটি শেষে ...

বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্র বর্ণনা করতে পারা যাবে।

বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্র ব্যবহার করে বৃত্তের পরিধি নির্ণয় করতে পারা যাবে।



বৃত্ত, গণিতের একটি মৌলিক আকৃতি যা আমাদের চারপাশে সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়। চাকা, চুড়ি, রুটি, পিজ্জা – এ সবই বৃত্তাকৃতি বস্তুর উদাহরণ। একটি বৃত্তের পরিধি হল তার চারপাশের বক্ররেখার দৈর্ঘ্য। এই পরিধি নির্ণয়ের জন্য আমরা একটি নির্দিষ্ট সূত্র ব্যবহার করি। এই টিউটোরিয়ালটিতে বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর প্রয়োগের কথা উল্লেখ করা হবে।


যেকোনো বৃত্তের উপর ক্লিক করে বড় করা যায়।

সহজ কথায়, বৃত্তের পরিধি হল বৃত্তকে একবার ঘুরে আসতে যে দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়, সেই দূরত্ব। বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি গণিতের একটি মৌলিক সূত্র। এই সূত্রটি জানা থাকলে আমরা যেকোনো বৃত্তের পরিধি সহজেই নির্ণয় করতে পারি।

বৃত্তের পরিধি চিহ্নিত চিত্র
বৃত্তের পরিধি চিহ্নিত চিত্র
বৃত্তের পরিধির এক-চতুর্থাংশ চিহ্নিত বৃত্ত চিত্র
বৃত্তের পরিধির এক-চতুর্থাংশ চিহ্নিত বৃত্ত চিত্র

বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি হল:
পরিধি = 2πr
এখানে,
r হল বৃত্তের ব্যাসার্ধ,
π (পাই) হল একটি ধ্রুবক সংখ্যা, যার মান প্রায় 3.1416 অর্থাৎ, π = 3.1416।

π (পাই) কী?

π হল একটি অমূলদ সংখ্যা। এর মান সর্বদা ধ্রুবক থাকে। π এর মানকে দশমিকের পর অসংখ্য স্থান পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়। π এর আনুমানিক মান হল 3.1416।

বৃত্তের ব্যাসার্ধ কী?

বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বৃত্তের যেকোনো বিন্দু পর্যন্ত রেখাংশ হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ।

বৃত্তের ব্যাস কী?

বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু দিয়ে যাওয়া এবং বৃত্তকে দুটি সমান ভাগে ভাগ করে এমন একটি রেখাংশকে ব্যাস বলে।
ব্যাস = 2 × ব্যাসার্ধ।

ব্যাসের ভিত্তিতে বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্র

ব্যাসের ভিত্তিতে বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি হল:
পরিধি = πd
এখানে,
d হল বৃত্তের ব্যাস,
π হল একটি ধ্রুবক সংখ্যা, যার মান প্রায় 3.1416।

ক্ষেত্রফলের ভিত্তিতে বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্র

ক্ষেত্রফলের ভিত্তিতে বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি হল:
পরিধি = 2πA
এখানে,
A হল বৃত্তের ক্ষেত্রফল,
π হল একটি ধ্রুবক সংখ্যা, যার মান প্রায় 3.1416।

বৃত্তের ব্যাসার্ধ, ব্যাস ও ক্ষেত্রফলের ভিত্তিতে পরিধি নির্ণয়ের সূত্রগুলোকে একত্রে নিচে দেওয়া হলো।

বৃত্তের ব্যাসার্ধ r, ব্যাস d, ক্ষেত্রফল A এবং পরিধি C হলে,

C = 2πr
C = πd
C = 2πA

উদাহরণ: একটি চাকার ব্যাসার্ধ 70 সেন্টিমিটার। এই চাকাটির পরিধি নির্ণয় করতে হবে।

সমাধান: মনে করি, চাকাটির ব্যাসার্ধ r = 70 সেন্টিমিটার।

চাকাটির পরিধি = 2πr একক
বা, চাকাটির পরিধি = (2 × 3.1416 × 70) সেন্টিমিটার
বা, চাকাটির পরিধি = 439.824 সেন্টিমিটার

সুতরাং, চাকাটির পরিধি 439.824 সেন্টিমিটার।

পরিধি নির্ণয়ের সূত্রের ব্যবহার

এই সূত্রটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন:

  • ইঞ্জিনিয়ারিং: চাকা, পাইপ, গিয়ার ইত্যাদি ডিজাইন করার ক্ষেত্রে পরিধি নির্ণয় করা জরুরি।
  • স্থাপত্য: বিভিন্ন স্থাপনা, সেতু, টানেল ইত্যাদি নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিধি নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়।
  • ভূগোল: ভূগোল: পৃথিবী মোটামুটি একটি গোলক। পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় বিষয়টি ভূগোলের অন্তর্গত।
  • খেলাধুলা: টেনিস বল, ক্রিকেটের বল, ফুটবল ইত্যাদির পরিধি নির্ণয় করা খেলাধুলার বিভিন্ন নিয়মের জন্য জরুরি।
  • বিজ্ঞান: বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বৃত্তের ব্যবহার হয়। এইসব পরীক্ষায় পরিধি নির্ণয়ের সূত্র ব্যবহৃত হয়।
  • দৈনন্দিন জীবন: আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন গোলাকার বস্তুর সাথে পরিচিত হই। প্রায়ই এইসব বস্তুগুলির পরিধি নির্ণয় করা আমাদের জন্য জরুরী হয়ে পড়ে।

পরিধি নির্ণয়ের কৌশল ও ক্ষেত্র

বাস্তব জীবনের ব্যবহৃত কতকগুলো বস্তুর পরিধি নির্ণয়ের কৌশল নিচে দেওয়া হলো। যেমন:

  • চাকার পরিধি নির্ণয়: একটি চাকার একবার ঘুরে আসতে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তা নির্ণয়ের জন্য এই সূত্র ব্যবহৃত হয়।
  • পাইপের পরিধি নির্ণয়: একটি পাইপের বাইরের বা ভেতরের পরিধি নির্ণয়ের জন্য এই সূত্র ব্যবহৃত হয়।
  • গোলকের পরিধি নির্ণয়: একটি গোলকের বৃহত্তম বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের জন্য এই সূত্র ব্যবহৃত হয়।
  • বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান: বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এই সূত্র ব্যবহৃত হয়।

পরিধি নির্ণয়ের সূত্রের প্রমাণ

পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি গাণিতিকভাবে প্রমাণ করা যায়। তবে এই প্রমাণটি বেশ জটিল এবং উচ্চতর গণিতের বিষয়।

পরিধি নির্ণয়ের অন্যান্য পদ্ধতি

বৃত্তের পরিধি একাধিক পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায়। উপরোক্ত পদ্ধতি ছাড়াও আরও যেসব পদ্ধতিতে বৃত্তের পরিধি নির্ণয় করা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • প্রায়োগিক পদ্ধতি: একটি দড়ি দিয়ে বৃত্তকে একবার ঘুরিয়ে নিয়ে দড়ির দৈর্ঘ্য মাপলে বৃত্তের পরিধি পাওয়া যায়।
  • গ্রাফিক্যাল পদ্ধতি: একটি বৃত্ত আঁকিয়ে তার পরিধি একটি স্কেল বা ফিতা দিয়ে মাপলে পরিধি পাওয়া যায়।

পরিধি নির্ণয়ের গুরুত্ব

বৃত্তের পরিধি নির্ণয় করা অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:

  • শিল্প: চুড়ি, পাইপ, গিয়ার, বল, বিয়ারিং ইত্যাদি ডিজাইন ও পরিমাপের করার ক্ষেত্রে পরিধি নির্ণয় জরুরি হয়ে পড়ে।
  • নির্মাণ: বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিধি নির্ণয় করা জরুরি।
  • ভূগোল: পৃথিবী একটি গোলক। পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করা ভূগোলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বৃত্তের পরিধি ও ক্ষেত্রফলের মধ্যে সম্পর্ক

বৃত্তের পরিধি এবং ক্ষেত্রফলের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র হল:
বৃত্তের ক্ষেত্রফল = πr² বর্গ একক।

এখান থেকে আমরা দেখতে পাই যে, বৃত্তের ক্ষেত্রফল তার ব্যাসার্ধের বর্গের সমানুপাতিক। অর্থাৎ, ব্যাসার্ধ দ্বিগুণ হলে ক্ষেত্রফল চারগুণ হবে। আবার, ব্যাসার্ধ তিনগুণ হলে ক্ষেত্রফল নয়গুণ হবে।

চলুন তাহলে এই প্রমাণটি শিখে নিই।

প্রমাণ: বৃত্তের ব্যাসার্ধ r হলে,
বৃত্তের ক্ষেত্রফল = πr² বর্গ একক।

ব্যাসার্ধকে তিনগুণ করলে ব্যাসার্ধ দাঁড়ায়, 3r। সেক্ষেত্রে,
বৃত্তের ক্ষেত্রফল = π(3r)² বর্গ একক
বা, বৃত্তের ক্ষেত্রফল = π ×9r² বর্গ একক
বা, বৃত্তের ক্ষেত্রফল = 9 ×πr² বর্গ একক
সুতরাং, বৃত্তের ক্ষেত্রফল = 9 ×(বৃত্তের ক্ষেত্রফল)।

অতএব, ব্যাসার্ধ তিনগুণ হলে ক্ষেত্রফল নয়গুণ হয়।

সুতরাং, বৃত্তের ক্ষেত্রফল তার ব্যাসার্ধের বর্গের সমানুপাতিক। (প্রমাণিত)

বৃত্তের পরিধি সম্পর্কিত কিছু মজার তথ্য

  • পাই (π) দিবস: প্রতি বছর 14 মার্চ পাই দিবস পালিত হয়। এই দিনটিতে পাই সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
  • পাই এর মান: পাই এর মানকে দশমিকের পর অসংখ্য স্থান পর্যন্ত নির্ণয় করা গেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এর সঠিক মান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
  • পাই এর ব্যবহার: পাই শুধুমাত্র গণিতে নয়, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থনীতি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি গণিতের একটি মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। এই সূত্রটি জানা থাকলে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান করতে পারি। বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে।