সহজ করে কিছু শেখা

সমকোণ কাকে বলে

এই টিউটোরিয়ালটি শেষে -

সমকোণ কি - তা বর্ণনা করতে পারা যাবে।

সমকোণ কাকে বলে - তা ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।

সমকোণের বৈশিষ্ট্য উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।

ইউক্লিডিও জ্যামিতিতে সমকোণ কি তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে পারা যাবে।

সমকোণের বিভিন্ন রূপ বিভিন্ন এককের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে পারা যাবে।



সমকোণ

যে কোণের পরিমাপ ৯০° তাকে সমকোণ বলে। অতএব, ৯০° পরিমাপের কোণই হলো সমকোণ।

একটি সমকোণ চিত্র
একটি সমকোণ দেখা যাচ্ছে।

এভাবে ডিগ্রির সাহায্যে সমকোণকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। তবে সমকোণকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য ডিগ্রি সম্বন্ধে পূর্বজ্ঞান থাকা আবশ্যক। তাহলে ডিগি কি - তা একটু জেনে নেওয়া যাক। পরস্পর লম্বভাবে পতিত দুইটি রশ্মির প্রান্তবিন্দু একই হলে রশ্মি দুইটি তাদের সাধারণ প্রান্তবিন্দুতে যে কোণে আনত, তার পরিমাপ ৯০°। এই কোণকে সমানভাবে ৯০ ভাগে ভাগ করলে প্রতি ভাগের পরিমাপ এক ডিগি বা ১° বিবেচনা করা হয়।

অন্যভাবে বললে, একটি রশ্মির প্রান্তবিন্দু একটি সরলরেখার উপর স্থাপন করলে উৎপন্ন সন্নিহিত কোণ দুইটির পরিমাপ সমান হলে কোণ দুইটির প্রত্যেকটিকে সমকোণ বলে। সমকোণের এই সংজ্ঞার সাথে ইউক্লিড প্রদত্ত সংজ্ঞার হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।



তাছাড়া সমকোণ কেবল দুইটি রেখাংশ, রশ্মি বা সরলরেখা দ্বারাই তৈরি হতে পারে - তা কিন্তু নয়। দুইটি তল দ্বারাও সমকোণ গঠিত হতে পারে। দুইটি সমতল পরস্পর লম্বভাবে মিলিত হলেও সমকোণ তৈরি হয়।

তাহলে চুড়ান্তভাবে সমকোণকে সংজ্ঞায়িত করলে দাঁড়ায়, পরস্পর লম্বভাবে পতিত দুইটি রশ্মির প্রান্তবিন্দু একই হলে রশ্মি দুইটির প্রান্তবিন্দুতে উৎপন্ন কোণকে সমকোণ বলে। সুতরাং ১ সমকোণ = ৯০°। সমতল জ্যামিতি সমকোণ নিয়ে আলোচনা করে।


ইউক্লিডিও জ্যামিতিতে সমকোণ

সমকোণ হলো ইউক্লিডিও জ্যামিতির মৌলিক উপাদানগুলোর একটি। মহাকালের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ ইউক্লিড তার তের খন্ডের Elements গ্রন্থে জ্যামিতি বিষয়ক কতকগুলো সংজ্ঞা, স্বতঃসিদ্ধ, স্বীকার্য এবং বৈশিষ্ট্যসমূহ সুবিন্যস্ত ও ধারাবাহিক আকারে লিখে রাখেন যেগুলোর উপর ভিত্তি করে ইউক্লিডিও জ্যামিতি গড়ে উঠেছে। ইউক্লিড প্রদত্ত সংজ্ঞাসমূহ ইউক্লিডিও সংজ্ঞা বলে সমধিক পরিচিত। আবার তাঁর প্রদত্ত স্বতঃসিদ্ধসমূহ ইউক্লিডিও স্বতঃসিদ্ধ এবং তিনি যেসব স্বীকার্যসমূহ ঘোষণা করেছেন সেগুলো ইউক্লিডিও স্বীকার্য বলে জগত জুড়ে সুপরিচিত। তের খন্ডের প্রথম খন্ডে দশম সংজ্ঞায় তিনি সমকোণ এবং লম্বরেখাকে সংজ্ঞায়িত করেন। তবে সমকোণকে তিনি ডিগ্রির সাহায্য ছাড়াই সংজ্ঞায়িত করেন। তিনি বলেন, দুইটি সরলরেখা পরস্পর ছেদ করলে, উৎপন্ন সন্নিহিত কোণ দুইটি পরস্পর সমান হলে কোণ দুইটির প্রত্যেকটিকে সমকোণ বলে। আর সরলরেখা দুইটিকে পরস্পর লম্ব রেখা বলে। আবার একই খন্ডের একাদশ ও দ্বাদশ সংজ্ঞায় তিনি সূক্ষ্মকোণ এবং স্থূলকোণ দুইটিকে সমকোণের সাহায্যে সংজ্ঞায়িত করেন। তাছাড়া, দুইটি কোণের যোগফল এক সমকোণ হলে কোণ দুইটির একটিকে অপরটির পূরক কোণ বলে।

প্রথম খন্ডের চতুর্থ স্বীকার্যে তিনি বর্ণনা করেনঃ সব সমকোণের পরিমাপ সমান। আর এই স্বীকার্যের উপর ভিত্তি করে তিনি সমকোণকে অন্যান্য কোণ পরিমাপের একক হিসাবে ব্যবহার করেন।


সমকোণের বিভিন্ন রূপ

সমকোণকে ভিন্ন ভিন্ন এককের মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রকাশ করা যায়।

একটি সমকোণের চিত্র
সমকোণ বা ৯০° দেখা যাচ্ছে।

এক-চতুর্থাংশ চক্র

এক-চতুর্থাংশ চক্র বলতে বুঝায়, একটি বৃত্তের চারদিকে এক চক্রের চার ভাগের এক ভাগ। একটি রশ্মির প্রান্তবিন্দুকে একটি বৃত্তের কেন্দ্রে স্থির রেখে রশ্মিটিকে বৃত্তের চার ভাগের এক ভাগ ঘুরালে যে কোণ উৎপন্ন হয় তার পরিমাপ এক সমকোণ। এক চক্রে বৃত্তের কেন্দ্রে ৩৬০° কোণ উৎপন্ন হয়।

∴ ৩৬০° = ১ চক্র

বা, ৪ × ৯০° = ১ চক্র

বা, ৯০° = চক্র

∴ ১ সমকোণ = এক-চতুর্থাংশ চক্র


৯০° (ডিগ্রি)

পরস্পর লম্ব দুইটি রেখাংশ তাদের সাধারণ প্রান্তবিন্দুতে মিলিত হলে, মিলিত বিন্দুতে যে কোণ উৎপন্ন হয় তার পরিমাপ ৯০° বা এক সমকোণ।


π2 রেডিয়ান

একটি বৃত্তের পূর্ণ চক্রে কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণের পরিমাপ ৩৬০° এবং রেডিয়ান হিসাবে তার পরিমাপ ২π রেডিয়ান।

∴ ৩৬০° = ২π রেডিয়ান

বা, ৪ × ৯০° = ২π রেডিয়ান

বা, ৯০° = ২π রেডিয়ান

∴ ৯০° = π রেডিয়ান

∴ ১ সমকোণ = ৯০°

∴ ১ সমকোণ = ৯০° = π রেডিয়ান

অতএব, ১ সমকোণ = π রেডিয়ান


১০০ গ্রেডিয়ান

কোণ পরিমাপের আরেকটি একক হলো গ্রেডিয়ান। ১ গ্রেডিয়ান হলো একটি বৃত্তের পূর্ণ চক্রের ৪০০ অংশের সমান। একটি পূর্ণচক্র = ৩৬০°।

∴ ১ গ্রেডিয়ান= ৩৬০° × ৪০০

বা, ১ গ্রেডিয়ান= ৩৬০° × ৪ × ১০০

বা, ১০০ গ্রেডিয়ান= ৯০°

∴ ৯০° = ১০০ গ্রেডিয়ান

অতএব, ১ সমকোণ = ১০০ গ্রেডিয়ান


সমকোণের বৈশিষ্ট্য

সমকোণকে বিশ্লেষণ করলে যেসব সমকোণের বৈশিষ্ট্য সমূহ পাওয়া যায় সেগুলো নিম্নরূপঃ

  • সমকোণের পরিমাপ ৯০°।
  • একটি সমকোণকে যেকোনো অনুপাতে দ্বিখণ্ডিত করলে যে দুইটি কোণ উৎপন্ন হয় তারা পরস্পর পূরক কোণ
  • সমকোণের বাহু দুইটি পরস্পর লম্ব।
  • রেডিয়ান কোণ হলো π সমকোণের সমান। অর্থাৎ, ১ রেডিয়ান = π সমকোণ।
  • একটি ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ হলে অপর দুইটি কোণের যোগফলও এক সমকোণ হয়।
  • এক সমকোণ অপেক্ষা ছোট কোণকে সূক্ষ্মকোণ বলে।
  • এক সমকোণের পরিমাপ একটি পূর্ণ চক্রের এক-চতুর্থাংশ।
  • কোনো বৃত্তস্থ কোণ সমকোণ হলে উক্ত বৃত্তস্থ কোণটি হয় অর্ধ-বৃত্তস্থ কোণ।
  • এক সমকোণকে সমান ৯০ ভাগে ভাগ করলে প্রতি ভাগকে ১° বলা হয়।
  • সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুকে অতিভূজ বলে।
  • একটি ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ হলে অপর দুইটি কোণ পরস্পর পূরক কোণ।
  • এক সমকোণের পরিমাপ ১০০ গ্রেডিয়ানের সমান। অর্থাৎ, ১ সমকোণ = ১০০ গ্রেডিয়ান।
  • এক সমকোণ অপেক্ষা বড় এবং দুই সমকোণ অপেক্ষা ছোট কোণকে স্থূলকোণ বলে।
  • চার সমকোণ মিলে একটি পূর্ণ কোণ তৈরি হয়।
  • এক সমকোণের পরিমাপ π রেডিয়ানের সমান। অর্থাৎ, ১ সমকোণ = π রেডিয়ান।
  • একটি সমকোণকে যেকোনো অনুপাতে ভাগ করলে যে দুইটি কোণ উৎপন্ন সেই কোণ দুইটি নিয়ে কোন ত্রিভুজ অঙ্কন করলে ত্রিভুজটি সমকোণী ত্রিভুজ হয়।
  • সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুই বৃহত্তম বাহু।
  • ইউক্লিড সমকোণের সাহায্যে লম্বরেখা, সূক্ষ্মকোণ এবং স্থূলকোণ বর্ণনা করেন।